ইসলাম

অধীনস্থদের নামাজের নির্দেশনা


নামাজের গুরুত্ব বোঝাতে নামাজের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ৮২ বার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নামাজ আদায় না করে মুমিন থাকা যায় না। কারণ মুসলিম আর অমুসলিমের মাঝে পার্থক্যই হলো নামাজ। (মুসলিম : ২৫৬)। আর নামাজ প্রতিষ্ঠা মানে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। নামাজকে অস্বীকার করা মানে দ্বীন-ইসলামকেই অস্বীকার করা। বিশ্বনবী (সা.) এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘যে নামাজ প্রতিষ্ঠা করল, সে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করল। আর যে নামাজ ধ্বংস করল, সে দ্বীনকেই ধ্বংস করল।’

নামাজ এমন ইবাদত যা শুধু নিজে আদায় করলেই হয় না; অধীনস্থদেরকেও আদায় করাতে হয়। নিজে নামাজ কায়েম করা যেমন ফরজ, তেমনি পরিবারের সব সদস্যকে নামাজের আদেশ দেওয়াও ফরজ।

আমাদের প্রিয় নবীকে উদ্দেশ করে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন।’ (সুরা ত্বহা : ১৩২)। আর রাসুল (সা.) পৃথিবীর সব অভিভাবককে উদ্দেশে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও এবং দশ বছর বয়সে নামাজের জন্য কঠোর শাসন কর।’ (আবু দাউদ : ৪৯৫)।

কেননা নামাজ মানুষের বোধশক্তিকে জাগ্রত করে পাপাচার থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে ভালো মানুষ হতে সাহায্য করে। এ ব্যাপারে কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত : ৪৫)

দেশের নাগরিকদের ভালো বানানোর স্বার্থে রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত তাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের নামাজের ব্যবস্থা করা ও নামাজের তাগিদ করা।

ইরশাদ হচ্ছে, ‘তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করলে নামাজ কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে আর অসৎ কাজে নিষেধ করবে। আর সব কাজের চ‚ড়ান্ত পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত।’ (সুরা হজ : ৪১)।

নামাজ নিয়ন্ত্রিত জীবনের শিক্ষা প্রদান করে। নামাজ দৃষ্টি ও মন নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা দিয়ে থাকে। নামাজ আদায় করতে গেলে সময়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। নামাজ একজন মানুষের জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে একজন মুমিন বান্দা সময়ানুবর্তিতা ও দায়িত্বপরায়ণতার শিক্ষালাভ করে থাকেন। এ ব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিঃসন্দেহে নামাজ বিশ্বাসীদের ওপর সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা : ১০৩)

আদর্শ জাতি ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন সত্যিকার নামাজি হবে সব নৈতিক গুণে সমৃদ্ধ একজন সুনাগরিক। কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার মধ্যে তৈরি হবে আল্লাহভীতি। জীবনের সবক্ষেত্রে আল্লাহভীতিকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর বিধিনিষেধ মেনে চলা নামাজের অন্যতম প্রশিক্ষণ। কেননা আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলার প্রশিক্ষণ নামাজের মধ্য দিয়ে অর্জন করা যায়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নামাজ পূর্ণরূপে আদায় হয়ে গেলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়; আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর। আর এ সময় তোমরা বেশি বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ কর। তবেই সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে।’ (সুরা জুময়া : ১০)। এ আয়াতে রিজিক অনুসন্ধানের পাশাপাশি নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ উপার্জন করতে গিয়ে নামাজ বাদ দেওয়া যাবে না এবং এর মধ্যেই সফলতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

নামাজের ফজিলত সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনও ধ্বংস হবে না।’ (সুরা ফাতির : ২৯)

যখন নামাজের সময় উপস্থিত হয়, তখন ভালোভাবে ওজু করে নামাজ আদায়ে জামাতে শরিক হতে হয়। কেউ ইচ্ছা করলে অজু ছাড়াই জামাতে শরিক হওয়ার সুযোগ নিতে পারে। কারণ একজন নামাজি ওজু করলেন, কী করলেন না, তা তো কেউ দেখে না। অন্য কেউ দেখুন অথবা না দেখুক আল্লাহ দেখছেন- এই ভয় নামাজির অন্তরে বদ্ধমূল হওয়ার কারণে সে ওজু ছাড়া নামাজে অংশ নেয় না।

সুতরাং একজন নামাজি নামাজের মাধ্যমে আমানত রক্ষার এ শিক্ষায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে গভীর অরণ্যে, জনমানবহীন ধূ-ধূ প্রান্তরে বা কর্মক্ষেত্রে কোনো পাপ কাজ করতে সাহসী হবে না। সে যদি রাস্তায় কোথাও স্বর্ণ বা টাকা পড়ে থাকতে দেখে, আর সে যদি সত্যিকার নামাজি হয় তাহলে সে কিছুতেই রাস্তায় পড়ে থাকা স্বর্ণ বা টাকা স্পর্শ করতে পারে না। কারণ তার নামাজ তাকে এমন শিক্ষা দেয়নি।

অনুরূপভাবে কর্মক্ষেত্রেও সে কাজে ফাঁকি দেবে না। আমানতের খেয়ানত করবে না। অতএব নামাজ আদর্শবান ও সুনাগরিক বানানোর এক অনন্য ব্যবস্থাপত্র।

About Freelancer Noyon

0 Comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.